সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০১০

মুঠোফোনের বিড়ম্বনা


যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, আদিযুগ থেকেই প্রচলিত নানা মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের নানা গল্প আমরা শুনেছি, পড়েছি। আমরা দেখেছি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যোগাযোগের নতুন নতুন মাধ্যম। যে যুগে যেমন ছিল, সেটাই তখনকার মানুষের জন্য চমক সৃষ্টি করতো। চমক এই যুগেও আসে। মানুষ ভীড় করে লাইন দিয়ে নতুন নতুন অত্যাধুনিক গ্যাজেট কেনেন।
যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, আদিযুগ থেকেই প্রচলিত নানা মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের নানা গল্প আমরা শুনেছি, পড়েছি। আমরা দেখেছি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যোগাযোগের নতুন নতুন মাধ্যম। যে যুগে যেমন ছিল, সেটাই তখনকার মানুষের জন্য চমক সৃষ্টি করতো। চমক এই যুগেও আসে। মানুষ ভীড় করে লাইন দিয়ে নতুন নতুন অত্যাধুনিক গ্যাজেট কেনেন।
ছোটবেলায় আমি টেলিফোনে কথা বলতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করেছিলাম। একটি যন্ত্র আমার আত্মীয়ের কন্ঠস্বর পৌছে দিয়েছিলো আমার কাছে। আরো উত্তেজনা হয়েছিল যখন ফ্যাক্স করেছিলাম প্রথমবার। হাতের লেখায় এক পাতার খোলা চিঠি, যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে পৌছে গেলো আমার সেই আত্মীয়ের কাছে। তিনিও উত্তর পাঠালেন, তার হাতের লেখায়, এসে গেল আমার যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে। কেমনই যেন অনুভূতি। কারন পোস্টম্যান নিয়ে আসছেনা এই চিঠি। কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছেনা এই চিঠি আসতে।


যখন ইমেইল এলো তখন অবাক হলাম। যখন মোবাইল ফোন দেখলাম, তখনও অবাক হলাম। এর পরে একে একে আইপড আইফোন আইপ্যাড সবকিছুই এসেছে। আরো কিছু আসবে। তার আগে -

মজার কথা শেয়ার করার জন্য এই পোস্ট শুরু করেছিলাম, সেইটা বলি। মোবাইল ফোন এখন প্রায় সবার হাতে হাতে। বাসার কাজের লোক, রাস্তার সুইপার - প্রায় সকলের কাছেই আছে রকমারি মোবাইলের বাহার। সবাই তার নিজের নিজের মতো ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ অত্যধিক ব্যবহার করেন, কেউ কেউ খুবই কম ব্যবহার করেন। আমি যখানে থাকি, সেই এলাকায় একটি অল্প বয়সী ছেলে, কিছুদিন আগেই গ্র্যাজুয়েট হয়েছে, চাকরী পেয়েছে, তার মোবাইল ব্যবহার দেখছি বেশ অনেকদিন ধরে।

আমি দেখছি বললে ভুল হবে। এলাকার সবাই দেখছে। দেখতে না চাইলেও দেখতে হচ্ছে। রোজ ছেলেটি অফিস থেকে ফেরে, কিন্তু সে এলাকায় ফিরে এসেও বাড়িতে ঢোকেনা। সে গোটা এলাকা ঘুরে বেড়ায় মোবাইল ফোন নিয়ে। নির্দিষ্ট একটি পথ দিয়ে সে যায় আর আসে। মোবাইলে কথা হয়েই চলেছে। কেন যায় আর আসে? কারন সে একটি সিগারেট নিয়ে হাঁটা শুরু করে, বেশিদুর যেতে পারেনা, সিগারেট শেষ হয়ে গেলেই ফিরে আসে একই পথ ধরে, আবার দোকান থেকে কেনে, আবার সেই নতুন সিগারেট ধরিয়ে আবার হাঁটা দেয়। এইভাবে সে দুই/তিন ঘন্টা ধরে পথে হাঁটাহাঁটি করে, ফোনে কথা বলে আর কতো যে সিগারেট কেনে আর ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেয় তার সংখ্যা আমার জানা নেই।

কিন্তু এলাকার সিগারেট বিক্রেতা রেগে গেছে। একদিন আমি যখন অন্যান্য টুকিটাকি জিনিস কিনতে গেছি, তখন আমাকে নালিশ জানাচ্ছে দোকানদার। তার নালিশ যে কেন এই ছেলে গোটা এক প্যাকেট একবারে কেনেনা। বার বার ফিরে এসে একটা একটা করে কেনে। বিরক্ত হয়ে গেছে দোকানী। আমি হেসেই ফেলেছি, কী আর করবো!

দোকানে এসেছেন বয়স্কা আরেকজন মহিলা, তিনি বললেন এইটা হলো আজকের যুগের "মুঠোফোনের বিড়ম্বনা"। এই যন্ত্রটি এই ছেলের সুবিধা করতে পারেনি, অসুবিধাই করেছে, তার কষ্ট আরো বাড়িয়ে তুলেছে, এই ফোন বাসায় থাকলে সে নাহয় শুয়ে বসে বাসা থেকেই কথা চালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সে এখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নিতে পারেনা। পথেই হাঁটতে থাকে। সম্ভবত দুই ঘন্টায় দুই প্যাকেট সিগারেট রোজ লাগে তার (বাকি সারাদিনে কতো জানিনা!) বিড়ম্বনা শুধু তারই হয়নি, সেইসাথে হয়েছে দোকানদারেরও। ৫/৭ মিনিট পরে পরে কেউ যদি বারংবার এসে একটা করে সিগারেট কিনতে চায় তবে দোকানদার তার মুনাফার ভাবনা শিকেয় তুলে দিয়ে উলটে ক্ষুব্ধই হয়ে উঠেছেন। কারন, এই দুই/তিন ঘন্টা ধরে দোকান সর্বদা ফাঁকা থাকেনা, অন্য কাস্টমারের মাঝেই সে এসে তাড়া দিতে থাকে, তাকে আগে সিগারেট দিতে হবে! একদিকে তার নেশা, অন্যদিকে কানে ফোন সেখানে অফিসের তরুনী ফোনে অপেক্ষা করছে! দোকানী ক্ষেপে অস্থির।

যাক গে, আপনারা যারা মুঠোফোনের অধিকারী এবং একইসঙ্গে ধূমপায়ী, তারা আমার উপরে দয়া করে ক্ষিপ্ত হবেননা, আমি কেবলই একটি উদাহরণ শেয়ার করলাম। সবাই সমান নয়। অনেকেই অনেক উপযোগী ব্যবহার করেন তাদের মোবাইল ফোনের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন